Friday, December 27, 2013

আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহা নবী (সঃ) হাজির ও নাজির

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করে মহা নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মত করে দিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহপাকের দরবারে লাখো কোটি শুকর আদায় করছি, আলহামদুল্লিাহ।

মহান আল্লাহ পাক উনার আপন হাবিব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে সমগ্র পৃথিবীতে সর্বাবস্থায় হাজির ও নাজির করে সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন- হে গায়েবের সুসংবাদদাতা নবী! নিঃসন্দেহে আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাজির-নাজির (উপস্থিত, পর্যবেক্ষণকারী) করে, সুসংবাদদাতা, সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর নির্দেশে আহ্বানকারী আর আলোকোজ্জ্বলকারী সূর্যরূপে। - সুরায়ে আহযাব, আয়াত নং-৪৫।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে আবুস সউদ ৪র্থ খন্ড ১০৭/১০৮ পৃষ্ঠা, তাফসিরে রুহুল মায়ানী ২২পারা ৪৫ পৃষ্ঠা ও তাফসিরে জুমাল ৩য় খন্ড ৪৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে- যাদের প্রতি আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্য আমি আপনাকে শাহিদ তথা হাজির ও নাজির করে পাঠিয়েছি। আপনি তাদের অবস্থাদি পর্যবেক্ষণ করতে থাকবেন, তাদের  আমল সমূহও প্রত্যক্ষ করবেন এবং তাদের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বহন করবেন এভাবে যে, তাদের মধ্যে কারা সত্যবাদী ঈমানের উপর অটল আছে, কারা ঈমানহারা হয়ে মিথ্যার মধ্যে রয়েছে, কারা সঠিক হেদায়েতের মধ্যে বিদ্যমান এবং কারা গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে। কিয়ামতের দিনে আপনার এসকল সাক্ষী ঈমানদারদের পক্ষে এবং কাফেরদের বিপক্ষে আল্লাহর দরবারে মকবুল হবে।
উপরে বর্ণিত তাফসিরগুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আল্লাহর হাবীব সাঃ আল্লাহপ্রদত্ত ক্ষমতা বলে হাজির ও নাজির।

সহীহ বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম কাসতালানী (রাঃ) মাওয়াহিবে লাদুনিয়া নামক কিতাবের ২য় জিলদের ১৯২ পৃষ্ঠায় তিবরানী শরীফ থেকে একখানা হাদীস শরীফ রেওয়ায়েত করেছেন তাহা এই- হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলে পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে- নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার জন্য সারা বিশ্বজগতকে উঠিয়ে রাখছেন। সুতরাং আমি সারা বিশ্বজগত দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত এজগতে যা কিছু হবে তা দেখতে থাকব। যেমন হাতের তালুকে দেখছি।

আল্লামা জারকানী (রাঃ) তাঁর লিখিত “ জারকানী শরীফ” নামক কিতাবের ৭ম জিলদের ২০৫ পৃষ্ঠায়  উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে যে, আল্লাহপাক আমার জন্য সারা দুনিয়াকে উঠিয়ে রাখছেন অর্থাৎ সারা দুনিয়াকে আমার জন্য জাহির ও কশফ করে খুলে দিয়েছেন এভাবে যে, আমার আয়ত্বাধীনে সারা দুনিয়ার বস্তুকে করে দিয়েছেন। সুতরাং আমি সারা বিশ্ব জগতকে দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত দেখতে থাকব। আল্লামা জারকানী (রাঃ) বলেন রাসুলে মকবুল (সাঃ) আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিজ চোখ মুবারক দ্বারা হাকিকী নজরে দেখছেন। এখানে নজরে ইলিমও মুরাদ লওয়া যাবেনা এবং তা দেখার সংবাদ ও মুরাদ লওয়া হবেনা।

এই আলোচনায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সাহবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরীন এমনকি সমস্ত আউলিয়ায়ে কেরামের আকিদা হল আল্লাহর হাবিব হাজির ও নাজির।

নবম শতকের মুজাদ্দিদ আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ুতী (রাঃ) তাঁর লিখিত “ আল হাবী লিল ফাতাওয়া” নামক কিতাবের ২য় জিলদের ১৫৩ পৃষ্ঠায় “আম্বাউল আযকিয়া ফি হায়াতিল আম্বিয়া” অধ্যায়ে উল্লেখ করেন যে- হুজুর (সাঃ)  এর এ দুনিয়াতে পাঁচটি কাজ রয়েছে। তা হলো-
১। উম্মতের আমলের প্রতি নজর বা দৃষ্টি মুবারক রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর হাবিব উম্মতের আমল সমূহ দেখছেন।
২। উম্মতের জন্য আল্লাহর হাবীব এস্তেগফার করছেন। অর্থাৎ আল্লাহর হাবিব সাঃ আল্লাহ তাআলার দরবারে উম্মতের গুনাহ মাফের জন্য সুপারিশ করছেন।
৩। উম্মত যেন গুনাহর কারণে বালা মুসিবতে পতিত না হয় সেজন্য আল্লাহর হাবিব (সাঃ) শাহানশাহী আল্লাহর দরবারে দোয়া করছেন।
৪। আল্লাহর হাবিব পৃথিবীর সর্বত্র পরিভ্রমণ করে সর্বত্র (শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, এলাকা, আতরাফ সব এলাকায় নিজ হাত মুবারক দ্বারা খায়র ও বরকত প্রদান করছেন।
৫। নিজ উম্মতের নেক বান্দার ওফাত হলে আল্লাহর হাবিব (সাঃ) তার জানাজাতে হাজির হয়ে আল্লাহপাকের শাহানশাহী দরবারে এ জানাজাকে কবুল ও মঞ্জুর করিয়ে নেন।

রাসুল (সাঃ) এর হাজির ও নাজিরের বিষয়ে আরো অনেক দলিল রয়েছে। সেগুলি পরে প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে কারো কোন আপত্তি থাকলে আমাদের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করুন।

No comments:

Post a Comment